একটা কাক ভালোবেসেছিল এক ময়ূরকে

 

একটা কাক ভালোবেসেছিল এক ময়ূরকে।




সে প্রায়ই ময়ূরের পিছে পিছে ঘুরে বেড়াত। ময়ূর সেটা বুঝতে পারলেও না বোঝার ভান করে কাককে এড়িয়ে চলত। এভাবে দীর্ঘদিন কেটে যায়।

একদিন ময়ূর তার বাসার সামনে একটি হলুদ খাম দেখতে পেল। সেই খামের ভিতরে ছিল একটি ছোট্ট কালো রঙের ফুল। ময়ূর বুঝতে পারল-এ ফুল কাকই পাঠিয়েছে।

কয়েকদিন পর কাকের সাথে ময়ূরের দেখা হলো।

ময়ূর

বলল-

"তোমার শরীর যেমন কালো, তেমনি তোমার রুচিও কালো। তাই তো এত সুন্দর সুন্দর রঙের ফুল থাকতে তুমি কালো ফুল পাঠিয়েছ!"

কাক ময়ূরের কথা শুনে কষ্ট পেয়ে চলে গেল।

তারপর বেশ কিছুদিন ময়ূরের আর কাকের দেখা হলো না। সপ্তাহ কেটে মাস, মাস কেটে বছর-কিন্তু কাকের কোনো খোঁজ পেল না ময়ূর। তবে ময়ূরও কাককে খুঁজতে যায়নি।

বছরের পর বছর পর হঠাৎ কাকের সাথে ময়ূরের দেখা হয়ে গেল। ময়ূর বলল-

"আমার রূপ দেখে সবাই আমাকে ভালোবাসতে চায়। তুমিও তো চেয়েছিলে। তবে আমাকে জয় করার চেষ্টা আর করলে না কেন?"

কাক জবাব দিল-

"তোমার সাথে জীবনে একদিনই আমার কথা হয়েছিল। তুমি যতদিন আমার সাথে কথা বলোনি, ততদিন ভেবেছিলাম-তোমার সুন্দর রূপের আড়ালে একটি সুন্দর মনও লুকিয়ে আছে। কিন্তু যখন দেখলাম,

ফুলের মতো জিনিসকেও তুমি রঙ দেখে বিচার করো-তখনই বুঝেছিলাম, আমি মরীচিকার পিছে ছুটছি। তাই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি।"

ময়ূর বলল-

"এখন যদি তোমাকে পেতে চাই, তবে কি তুমি আমাকে ভালোবাসবে?"

কাক বলল- "চোখের নেশা কেটে গেছে। চোখের নেশা কেটে গেলে ময়ূরের সৌন্দর্যও আর চোখে ধরা পড়ে না। তখন ময়ূরকেও কাকের মতো লাবণ্যহীন মনে হয়।

জীবনের আসল বাস্তবতা তখন চোখের সামনে দীপ্ত হয়ে ওঠে। সেই বাস্তবতাই সঠিক পথের দিশা দেয়। বাস্তবতাকে ভুলে আবার আবেগে গা ভাসালে, দিশাহীন নাবিকের মতো অথই সাগরে ঘুরপাক খাব।"

তারপর কাক ও ময়ূর বিপরীত দিকে হাঁটা শুরু করল।

ধীরে ধীরে দু'জনার দূরত্ব বাড়তে লাগল। আর এ দূরত্ব যত বাড়ল, "জীবন" নামক সমুদ্র থেকে তারা তত বেশি মুক্তা সংগ্রহ করতে পারল।

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url